কিন্টসুগি
দেশের সংস্কার আন্দোলন এ হতাহতের সং্খ্য
নিহত: ১৫০০+
আহত: ৬০০০+
আটক: ১০ হাজার+, ২ লক্ষের অধিক ব্যাক্তিদের আসামী করে মামলা দায়ের (লিংক)
এই সং্খ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে...
(প্রথম খসড়া) ৩০ এবং ৩১/০৭/২০২৪
জাপানে একটা রেওয়াজ আছে । তাঁরা ভেঙ্গে যাওয়া মাটির কিংবা সিরামিকের তৈরি আসবাবপত্র ফেলে দেয় না । খুব যত্ন করে এক এক টুকরা করে সোনালি রং এর বিশেষ আঠা দিয়ে জোড়া লাগায়। জোড়া দেয়ার পর সেই বস্তুর শরীর এ আকাবাকা সোনালী রেখা বেমানান লাগে না । ফ্রাংক্যানস্টাইনের দানবের মতো দেখতে কুৎসিত লাগে না । এই ভাঙ্গা কে গড়ে নেওয়া শিল্পের তাঁরা নাম দিয়েছে কিন্টসুগি।
*
পুলিশ কনস্টেবল হারুন এর মাথায় একটাই শব্দ বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে । গ্যাঞ্জাম । গ্যাঞ্জাম । গ্যাঞ্জাম । কখন কার মুখ থেকে তাঁর কানে এসেছে তিনি বলতে পারেন না । কিন্তু শব্দটা তাঁর সামনে থাকা ছেলে মেয়েদের মুখের স্লোগান এর মতো বার বার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে । তিনি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলেন উপরের দিকে । মাথার হেলমেটটা খুলে দীর্ঘ নিশ্বাস নিলেন । এখন সকাল এগারোটা । জুলাইয়ের সূর্যের তীক্ষ্ণরশ্মি গায়ে এসে পড়ে । গরমে শরীর সীদ্ধ হয়ে যাচ্ছে । শরীর এর ভেস্ট খুলে ফেলতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু ইচ্ছে করলেই সম্ভব না । অবস্থা ভালো না । কখন বজ্জাতের দল ব্যারিকেড ভাঙতে আসে । এরা নাকি ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষিত । লাঠি, কাদানি গ্যাস, আর বুলেট খেয়েও এদের শিক্ষা হয় না । বেক্কলের দল সব । তিনি একদলা থুতু পায়ের কাছে ফেললেন ছেলেমেয়েদের ভীড়ের দিকে তাকিয়ে । এদের মধ্যে একজন তাঁর দিকে তাকিয়ে কয়েক কদম এগিয়ে এসে আরও জোরে স্লোগান তুললো, "ভাইয়ের বুকে রক্ত কেনো" পেছনের ভীড় গর্জে উঠলো, "জবাব চাই, জবাব চাই" । কনস্টেবল হারুন মাথায় হেলমেট পড়লেন । দাত কিড়মিড় করলেন । মুখে বললেন, শুয়োরের বাচ্চা । তোদের এনার্জি সব বের করবো । তিনি হাতের গানটা এমন শক্ত করে ধরলেন যেন সেটা কোনো ছাত্রের গলা । টিপে স্লোগানের শেষ শব্দটুকু বের করবেন । তখন দুপুর বারোটা বাজতে আর দশ মিনিট । স্থানঃ______
*
স্নেহ রিকশায় বসে আছে । মামা দুই পা দিয়ে ভিষন জোরে পেডেল ঘুড়িয়ে যাচ্ছেন । রকেটের গতি আনার ব্যর্থ চেষ্টায় তিনি ক্লান্ত । পিঠ বেয়ে ফুয়েলের মতো দর দর করে ঘাম বের হচ্ছে । কারণও আছে । রাস্তার অবস্থা ভালো না । কোন দিক থেকে কখন মিছিল আসে আর কখন তাঁর পেছনে পেছনে ছুটে আসে পুলিশের গুলি তাঁর ঠিক নেই । ইতোমধ্যে কাঠ লোহার এই যান গুলি আর পাশবিক জোরের শিকার হয়েছে । পেছনে দশটা বুলেটের দাগ আর হুডের একটা ভাঙা ফ্রেম সেই দিনের সাক্ষী । স্নেহ এখন বাসার দিকে যাচ্ছে । খিদে পেয়েছে বেশ । গোসল করতে হবে । খেতে হবে । হঠাৎ দুম দুম করে আওয়াজ হলো । স্নেহ আর রিকশাওয়ালা মামার কান সজাগ । এই শব্দের সাথে এতোদিনে তাদের পরিচয় হয়ে গিয়েছে। টিয়ারশেল ছোড়ার শব্দ । রিকশা মিছিলের প্রায় কাছের জায়গা দিয়ে যাচ্ছে । স্নেহের মন খচখচ করছে । ভেতরের স্কাউট সেন্স জেগে উঠছে । মামা কে বললো রিকশা এক পাশে রাখতে । মামা ঘাড় ঘুড়িয়ে মানুষটার দিকে তাকালো । এই গ্যঞ্জামের মধ্যে রিকশা দাড় করানোর মানে কি! মানুষটা কি পাগল? আপাদমস্তক তাকে পরখ করতে লাগলো ।
স্নেহ মাহি কে কল করলো । মাহির বাসা ভার্সিটি ক্যাম্পাসের কাছে । এই কয়েকদিন বলতে গেলে তাঁরা ক্যাম্পাসের মিছিল আর হসপিটালেই দৌড়াদৌড়ি করছে । পানির বোতল নিয়ে দৌড়াচ্ছে । বলছে পানি লাগবো কারো, পানি, পানি । মাহি প্রথম রিং এ কল রিসিভ করলো । বল্লো, কোথায় তুই? হাফিয়ে কথা বলছে । পেছনে হট্টগোল । পুলিশের বাশির শব্দ । "কাছেই, আসবো?" স্নেহ জিজ্ঞেস করলো । "আসলে ভালো হয়", মাহি বললো । "আসছি তাহলে" । মামা চোখে মুখে বিশ্ময় নিয়ে তাকিয়ে । আল্লাহ এই ছেলে কে কি মাটি দিয়ে বানাইছে? স্নেহ মামার দিকে ভাড়া বাড়িয়ে দিলো । দশটাকা বেশী দিলো । সাবধানে চলে যান মামা । আফনে মিছিলের দিকে যান? মামার গলা উদবিগ্ন । স্নেহ মামার দিকে একটা হাসি দিয়ে ক্যাম্পাস(?)এর দিকে রওনা দিলো ।
*
(বিরতি দিচ্ছি । এখন সময় রাত ১ঃ৪০ । রুমের লাইট অফ করে টাইপ করতে কষ্ট হচ্ছে । পরে কি লিখবো সেটা মাথার কোনো একটা কোণায় সেধিয়ে আছে । বের হচ্ছে না । সকালে ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো)
Comments