উপায়
অন্যসবসময়ের মতো সেদিন বিকালে রেলস্টেশনে বসে ছিলাম । হাতে আমার নোটখাতা । গত সাত দিন ধরে ভীষণ চেষ্টা করছি কিছু একটা লিখার । গল্প, কবিতা বা রচনা । কিন্তু সেসবের কিছুই মাথায় আসছে না । তার বদলে কাফকার মতো অল্প শব্দের দিনলিপি লিখছি । ৪/০৯/২৪ এ লিখলাম “দেখা হয়ে ভালো হলো”; ছয় তারিখ লিখলাম “আজও একই”; সাত তারিখে, “কেন যাচ্ছি?”; দশে লিখলাম, “ফুল নয়, দীর্ঘশ্বাস” । দিনগুলো বড্ড বেয়াড়াভাবে যাচ্ছে ।
তবে আজকের আকাশ মেঘলা । ফুরফুরে বাতাস দিচ্ছে । স্টেশনে লোকেরা ট্রেন আসার অপেক্ষায় এদিক-সেদিক ঘোরা-ফেরা করছে । কেউবা হেঁটে ক্লান্ত হয়ে এখন ব্যাগ পাশে নিয়ে বিরক্ত হয়ে বসে আছে । লেখা আসার পরিবেশ তৈরী হয়ে আছে । এখন আসলেই হলো । পেছনের থামে হেলান দিয়ে আকাশ এর দিকে তাকালাম । বৃষ্টির সাথে সাথে চিন্তা ধারার বর্ষণ হোক!
এই সব ভাবছি এমন সময়ে আমার গায়ে কারোর ছায়া পড়লো । চোখটা একটু নামিয়ে এনে ছায়ার সুরত দেখলাম। উসকো-খুসকো চুল, চেহারায় অযত্নের ছাপ, ঠোঁটের চামড়া ফাটা। গায়ে হলুদ রঙের বিবর্ণ হাফ-হাতা শার্ট আর প্যান্ট । মনে হলো আমারই সমবয়সী । হয় পাগল নয়তো পাগল হওয়ার টিকিট ইতোমধ্যে কেটে ফেলেছে । সামনে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছে । টাকা চাইবে হয়তো । পকেটে দশটাকা আছে, চাইলে দিয়ে দিবো । আগ বাড়িয়ে দেয়ার মানে হয় না । চোখটা আবার নিম্বাস মেঘের দিকে ফিরিয়ে নিলাম । দক্ষিণের দিকে পরিবার সমেত যাচ্ছে । গন্তব্যে পৌছে তারা মাতম করবে ।
কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি?
শুদ্ধ উচ্চারণ আর গলায় চিকন স্বর শুনে আমি হতবাক । আবার তাকালাম তাঁর দিকে। হুলিয়ার সাথে কণ্ঠের হালের মিল না পেয়ে আমার মস্তিষ্ক কিঞ্চিত বিমূড় । বিনয় মেশানো প্রশ্নের উত্তর বিনয়ের সাথে না দিলে পাপ হবে, তাই বললাম,
করতে পারেন
প্রশ্রয় পেয়ে ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো, আপনি কখনো প্রেমে পড়েছেন?
শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো । বললাম, পড়েছি ।
কখনো এর থেকে বের হতে পেরেছেন?
তার গলায় জানার উৎসাহ । আমি বললাম, না । ছেলেটা আমার না শোনারই অপেক্ষাতেই ছিলো । বললো,
খুবই সহজ ! আগে কেউ একজনের প্রেমে হাবুডুবু খেতেন, এখন কিছু একটার প্রেমে হাবুডুবু খাবেন ।
আমি বিরসভাবে বললাম, ভালো ত !
ভালো হলে দশটাকা বের করুন, আমার ফি!
বলেই হাত বাড়িয়ে দিলো । পাঞ্জাবির পকেট থেকে দশটাকা বের করে দিয়ে দিলাম । ছেলেটা আমাকে মহৌষদ জানানোর খুশি নিয়ে হেঁটে চলে গেলো । আরেকটু সামনে আরেকটা ছেলে বসে মোবাইল টিপছে। দেখলাম তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে সে আবার মাথা চুলকাচ্ছে ।
এতক্ষণ খেয়াল করিনি আমার পাশে একজন বুড়ো বসে ছিল । হেহে করে হেসে বললেন,
এর কামই এই! যারে পায় প্রেম নিবারণের অষুধ দেয় । তয় ভিক্ষা করে না এইডা ভালা বিষয় । রাসুলের নিষেধ ।
মজার একটা ব্যাপার হলো । ভুলে যাওয়ার আগে খাতায় টুকে রাখছিলাম । লোকটার কথায় অন্যমনস্কভাবে বললাম, জ্বি । তিনি আরেকটু কাছে এসে বললেন,
কি লিখেন?
আমি বললাম, কিছু একটা!
১৩/০৯/২৪ । মুন্সেফবাড়ী ।
Comments