কনফেশন এবং কনফেকশনারিজ

বিভ্রান্ত হয়ে রাজগঞ্জ বাজার থেকে বের হলাম । বাজারখরচ একটা হয়তো বাদ গেছে । কিন্ত কি নেয়া হয় নাই সেটা মনে আসছে না । লেবু, টমেটো, গাজর, ধনেপাতা, পেয়াজ আর আলু নেয়া হলো । আর কি ছিলো? বাসায় একটা কল করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায় । তবে তাড়াহুড়ার মধ্যে মোবাইলটাই আনতে ভুলে গেছি । বুড়ো হয়ে যাচ্ছি ২৪ বছরেই !


ভাবছি বাসায় ফিরে যাবো নাকি আরো কিছুক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবো । যদি হঠাৎ মনে হয়ে যায় । এমন সময় দোকানটা চোখে পড়লো । বাজারের গেইটটার পাশে । মনে হয় না দোকানের বয়স এক সপ্তাহ ছাড়িয়েছে । নামটা লাল ব্যাকগ্রাউন্ডের সাইনে মোটা সাদা ফন্টে লিখা । কনফেকশনারিজ না হয় বুঝলাম। কিন্ত কনফেশন কেন? বড় ধাঁধা লাগলো । মিষ্টি না খেলেও একবার ঢু মারা উচিত । নতুন কিছু দেখলেই জয়গান করতে ইচ্ছে করে । দেখা যাক এ দোকান জয়গানের প্রাপ্য কিনা । 


দরজাটা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই মৃধু ঠান্ডা বাতাস গায়ে এলো । আগের দোকানে এই সুব্যবস্থা ছিল না। ‘কে এবং কে’ ১ নম্বর, সাবেক দোকান ০ । মিষ্টি গন্ধ নাকে এলো ।  ভেতরটা ছিমছাম । খোলামেলা । দুই পাশের দুই দেয়ালে তিনটা করে ছোট ছোট গোল টেবিল চেয়ার পাতা । পেছনের দেয়ালে পাতা আছে একটা । দোকানের মাঝে দুইটা থাম আছে। দুই থামের মাঝে একটা শেল্প । নিচের তাকে নানান রঙ এর মোলাটের বই । তার উপরে সারিবদ্ধ ফাইল । ফাইলে এ, বি, সি দিয়ে লেবেল করা । এখানেই কি তবে কনফেশনগুলো জমা থাকে? 


  • কি লাগবে ভাই আপনার? 


পিছনে ফিরে দেখলাম সাদা এপ্রোন পরা ত্রিশ কিংবা ত্রিশের কাছাকাছি হবে একজন সুদর্শনা নারী । এও নতুন ব্যপার । সাবেক দোকানের কাউন্টারে দাড়াতো মধ্যবয়সী বেরসিক এক জীব । তাদের নম্বর এখন ডবল শূন্য । নারীর গলার স্বরের সাথে চেহারা মানানসই । চোখে মুখে জানার আগ্রহ । 


  • কিছু লাগবে না, আপু! নতুন দোকান দেখে ভাবলাম ঢুকে দেখি!


ক্রেতা বিক্রেতার সম্পর্ক কেনা বেচায় । ক্রেতার কিনতে চাওয়ার মাঝেই বিক্রেতার সুখ । না কিনতে চাইলে সব অসুখ এসে বিক্রেতার মাথায় ভর করে । ভ্রু উপরে উঠে যায় । আমার কিনতে না চাওয়ার কথা শুনে দেখলাম আপুর ভ্রু সোজা আছে । আশার বিষয়। তিনি আমার কথা শুনে মুচকি হাসলেন । বললেন,

  • নামটা চোখে পড়েছে, নাহ?

  • জ্বি । কিন্তু আপু, এমন অদ্ভুত নাম কেনো? 


আপু আমার প্রশ্ন শুনে মনে হলো মজা পেলেন । মাথাটা এক পাশে কাত করে চোখ বুঝে হাসলেন । হাসিটা দেখতে সুন্দর । মায়া আছে । আপুর নামের অর্থ নিশ্চয় এমন যার মানে হাসি বা হাসুক বা এই জাতীয় কিছু হবে। আপুর এপ্রোনে আমার চোখ গেল। সাদা রঙ এর বেজ-এ কালো হরফে লিখা, “ইজমা”।


  • নামের ব্যাপারটা বড় মজার! তোমার দুলাভাই….ইয়ে তুমি করে বলছি

  • সেটাই মানায় আপু । বয়সে আমি ছোট হবো

  • দাঁড়িয়ে কেন টুলটায় বসো!


আপু মনে হচ্ছে মিশুক প্রকৃতির মানুষ । গল্প করতে ভালোবাসেন । তবে গল্পগুজবের এর জন্যে স্থান একটা বড় বিষয় । স্থান ঠিক না থাকলে একটা অস্বস্থি কাজ করে । আপু আমার অস্বস্থি টের পেয়ে বললেন,

  • বসো আপাতত। যখন কাস্টমার আসবে তখন নাহয় দেখা যাবে! নতুন দোকানে মানুষ এর আনাগোনা এমনিতেও কম হয় 

আমি সামনে থাকা হাল ফ্যাশনের ডিজাইনের টুলে বসতে বসতে বললাম, 

  • যে নাম দিয়েছেন আপু! সেটার রহস্য জানার জন্যেই লোক জড়ো হয়ে যাবে!

  • নাম কিন্তু দেয়ার কথা ছিলো কনকাশান এন্ড কনফেকশনারিজ! হি হি হি

  • কনকাশান? কেনো কেনো!

  • তোমার দুলাভাই, সিড়ি থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল

  • কি সর্বনাশ! 

  • অনেক আগের ঘটনা অবশ্য । প্রায় ৬/৭ বছর হবে । তখন দুলাভাই ছিল না । তখন সে শুধু ছিল মাশফি


বলে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলেন । বুঝতে পারলাম প্রেম যুগের সময়টা আপুর মনে এখনো সজীব ।

  • তবে মাশফি ভাই সিড়িতে উঠতে গেলেন কেনো? 

  • কেকের জন্যে!

  • কেক?

  • হ্যা! আমি কেক ইন্থুজিয়াস্ট । এইযে এগুলো! আমার নিজের বানানো! 


অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি আমার চোখ স্বচ্চ কাচের ভেতরে রাখা লাল, ক্ষয়েরি আর নীল রঙ এর ভেলভেট কেক এর দিকে যায় নি । 

  • দিবো এক স্লাইস?

  • ইয়ে, আপু, আমি মিষ্টি খাই না!

  • স্যাড! তবে মাশফি এমন মিষ্টি খেতে পারে! আমার কেক এর পাগল! তারই এক নমুনা ছিল তার সিড়ি বেয়ে ওঠার পাগলামি । হয়ে ছিলো কি, সেদিন ছিল শুক্রবার । আমার কেক বানাবার দিন । কেক বানিয়ে মাশফিকে ছবি তুলে পাঠালাম । সে ইমোজি পাঠিয়ে ভাসিয়ে দিলো, রিপ্লাই পাঠালো, এই আসছি! আমার জন্যে এক পিস রাখো প্লিজ! 

  • তারপর

  • মাশফি একটু মোটু কিসিমের মানুষ । তখনো ছিলো । সে বাসার বারান্দার নিচে দাঁড়িয়ে ম্যাসেজ পাঠালো, কুইক! আমি নিচে! । গিয়ে দেখি বেচারা সাইকেল চাপতে চাপতে গলতে গলতে এসেছে। এদিকে বক্স বারান্দা থেকে নামিয়ে দিবো তার উপায় নেই । ঘর তন্ন তন্ন করে খুজেও না পেয়েছি দড়ি না শপিং ব্যাগ । দো-তলা থেকে বক্স ফেলার প্রশ্নই আসে না । এদিকে মাশফি তো অধৈর্য হয়ে কান্ড বাধালো । পাড়ায় ডিশলাইনের তার ঠিক করতে খাম্বার সাথে সিড়ি রাখা ছিল । সে সেটা এনে রাখলো আমাদের বারান্দার কাছে! এদিকে আমার বুক ধরপড় করছিল! বাবা বাইরে তখন, পথে যদি দেখে ফেলে কোন মটু ছেলে তার মেয়ের সাথে লাইন মারছে তাহলে কেয়ামত বাধিয়ে ফেলবে! এদিকে মাশফি কেকের পাগল হয়ে সিড়ি বেয়ে উঠছে । তার ভারে সিড়ি নড়া-চড়া করছিলো । আমি ছিলাম ডাবল আতঙ্কে । একটু কাছে আসতেই তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে বক্সটা দিলাম । বললাম, তাড়াতাড়ি নামো, আব্বু দেখতে পারলে তোমাকে স্লাইস করে ফেলবে । কেকের স্বাদ আর পাবা না এই জীবনে ।  



আপু নাক কুচকালো । চোখে মুখে অপরাধী অপরাধী ভাব । বললেন,


  • ওর পড়ার জন্যে হয়তো আমি কিছুটা দায়ী । কিছুটা । বাবার নাম শুনে আরও তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে তার পা হড়কে গেলো । মানুষ পড়লে যে বস্তা পড়ার মতো শব্দ হয় সেটা সেদিন জানলাম । 


আমি দৌড়ে নিচে নামলাম । গিয়ে দেখি তখনো সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে । তবে মাথা ফাটে নি । আমার ছোট ভাইটা পিছনে পিছনে এসেছিল । দুজনে ধরাধরি করে হাসপাতাল নিয়ে গেলাম । সেদিনই ঘরে জানাজানি হয়ে গেল । বলাইবাহুল্য বাবা বেশ কিছুক্ষণ রাগারাগি করলেন । তবে হাসপাতালে মাশফির বাবার সাথে দেখা হওয়ার আশ্চর্য রকম চুপ হয়ে গেলেন । দুজনের ভাব জমে গেল । পুরো সিনেমার মতো ব্যাপার স্যাপার!


  • বাহ! সুন্দর প্রেম, তবে ‘কনফেশন’ রাখার রহস্য তো এখনো ভেদ হয়নি


ইজমা আপু মুখ খুলতে যাবেন এমন সময় দরজা ধাক্কা দিয়ে হ্যান্ডসাম দেখতে দুজন নর-নারী ঢুকলো । আমাদের চোখ চাওয়া-চাওয়ি হলো । ছেলেটা আপুর দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে ইশারা করে ডান পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো, তার সাথে থাকা মেয়েটা আমাদের দিকে পিঠ দিয়ে বসলো । আগেই বলেছি টেবিল্ গুলো ছোট, দুটো হাত রাখার মতো টেবিলে জায়গা থাকে না, এটা দেখে ছেলেটা বিরক্ত। গলা ঝুকিয়ে তার প্রেয়সীর কাছে কিছু একটা ফিসফিস করলো। অভিযোগ করছে হয়তো । ছেলেটার চোখ হঠাত আমার দিকে ফিরলো । এতক্ষণ টুল ঘুরিয়ে ওদের দেখছিলাম, লজ্জা পেয়ে শরীরটা আবার কাউন্টারের দিকে ঘুরিয়ে নিলাম । তবে আশার খবর কাউন্টারে দেয়ালে কাঁচ দিয়ে সাজানো । শরীর না ঘুরিয়েও দেখা যাবে কি করছে । 


দোকানে মনে হচ্ছে আপু একাই সামলাচ্ছেন। তিনি কাউন্টার থেকে বের হয়ে হাতে প্যাড আর কলম নিয়ে যুগলের টেবিলের দিকে গেলেন ।


  • ওয়েলকাম টু কনফেশন এন্ড কনফেকশনারিজ । আমরা ভেলভেট কেক এবং কফি সার্ভ করি । 

এই যে মেন্যু । 


একদম খাঁটি আমেরিকান একসেন্ট নিয়ে বাংলা কথাগুলো বললেন । শুনতে খারাপ লাগে না । রাজগঞ্জ বাজারের মাঝে এমন মিরাকল চোখে পড়ে না । পড়ার কথা না । একে তো ইউনিক নামের দোকান, তারউপর কাউন্টারে সুন্দরী মানবী, আর খাবার পরিবেশনে আছে একটা মিনিমালিস্টিক এপ্রোচ । যুগলদ্বয় ও দেখলাম অবাক হলো । ছেলেটা মেন্যুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মেয়েটার দিকে তাকালো । সঙ্গিনীর সিন্ধান্তই শিরধার্য । সঙ্গিনী ইজমার আপুর দিকে তাকিয়ে বললো,


  • আমাদের এক স্লাইস রেড ভেলভেট কেক আর কফি দিন 


আপু প্যাড এ খস খস করে অর্ডারটা লিখে ফেললো । কাউন্টারে এসে প্যাড থেকে কাগজ ছিড়ে সেটা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে দিলো । আর কাঁচের ভেতর থেকে কেকের দুটো স্লাইস করলেন । দুটো কাঁচের প্লেটে কেক দুটো রাখলেন ।  নিষ্কর্মার মতো বসে থাকতে অড লাগছিলো । আপুকে একা কাজ করতে দেখে অসহায়ও লাগছিলো । আমি টুল থেকে উঠে আপুকে বললাম,


  • প্ল্যাটটা আমাকে দিন, আপু । আমি নিয়ে দিচ্ছি


আপু না করতে যাচ্ছিলেন কিন্তু কি ভেবে বললেন, থ্যংক ইউউউ!

জবাবে আমি মুচকি হেসে প্লেট দুটো হাতে নিয়ে নিলাম । পা দুটোকে এগিয়ে নিয়ে ফেলাম যুগলদ্বয়ের টেবিলের কাছে । প্লেট দুটো তাদের দুজনর দুপাশে রাখলাম । চোখটা তরুণের তরুণীর দিকে পড়লো । পিঠ দেখে চেহারার যে অবয়ব মন গড়েছিল তার সাথে চেহারার কিঞ্চিত পার্থক্য আছে । তবে সুন্দর এর তালিকা থেকে বাদ দেয়া যায় না। তরুণী লাল কেকের দিকে চোখটা রেখে নিচু স্বরে বললো, থ্যংক ইউ


আমার দিকে তাকালে হয়তো দেখতে পেতো জবাবে আমি মুচকি হাসি দিয়েছি । তরুণের দিকে তাকিয়ে তাকেও একটা ভদ্রতাসূচক মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, এনজয় । তরুণ এর চেহারায় কিছুটা বিশ্ময়, কিছুটা বিমুঢ়তা । থাকা স্বাভাবিক । একটা নীল হাফ-হাতা শার্ট আর খাকি রঙ এর প্যান্ট ঠিক ওয়েটার এর পোশাক না । পেছন থেকে শুনছি কাটা চামচের টুকটাক । মেয়েটার ঝরঝরে কন্ঠ । কি নিয়ে যেনো হাসছে ।  আবার টুলে এসে বসলাম । কাউন্টারে ধোয়া ওঠা কফি রাখা । আমি আপুর দিকে তাকালাম, চোখ দিয়ে বললাম, এসব কেনো । জবাবে সেই মুচকি হাসিটা দিলেন ।


এক ধাপ গলা নামিয়ে বললেন,

  • কি যেন বলছিলাম? 

  • কনফেশন নাম রাখার রহস্য, আমি মনে করিয়ে দিলাম, কফিতে একটা ছোট চুমুক দিয়ে । 

  • রহস্য-টহস্য না, খুবই সাদা-মাটা প্রাকৃতিক ব্যাপার 


শুরুতে আপুর কন্ঠে যে ভোরের বাতাসের মতো ফুরফুরে আমেজ ছিলো, তাতে অস্ত নেমে এখন সন্ধ্যার আলোর মতো বিষন্নতা নেমেছে । কেনো? সেই কেনোর উত্তর আপু শুরু করলেন এভাবে

  • মাশফি রোমান্টিক প্রকৃতির মানুষ । মিশুক । সবার সাথেই তার মনের মিল । সবাই ই তার মনের মানুষ । কেউ রুষ্ট হয়ে কথা বললেও সে ভদ্রতা দেখিয়ে কথা বলে যায় । কারোর সাথেই শত্রুতা রাখতে চায় না । বলে, কি দরকার শুধু শুধু সম্পর্কের অবনতি করার । কেউ আমার সাথে কথা বলতে না চাইলে না বলবে। সেটা একান্ত তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। মেয়েদের সাথে তার সম্পর্ক অনেকটা রবিন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতার’ অমিতের মতো । ঔদাসিন্য নেই, আসক্তি দেখা যায় না। আগ্রহ নেই, উৎসাহ আছে । শুরুতে আমার খটকা লাগলেও, আর আজে বাজে কিছু গুজব ছড়ালেও, বেশ কয়েক মাস পরে তাকে চিনতে পারি । 'পিউর সোল' যাকে বলে । যখনই সাহায্য ছেয়েছি নির্দ্বিধায় সাহায্য করেছে । কখনো ইনবক্সে সেই ভার্সিটির ছেলেমানুষি স্বভাব দেখায়নি। তাই সবসময় পাশে পাশে হেটেছি । 


আপু থেমে যুগলদ্বয়ের টেবিলের দিকে চোখ দিলেন । আমি আয়নার দিকে তাকালাম । তাদের কেক খাওয়া প্রায় শেষ । ইজমা আপু কফি মেশিন থেকে কফি নিয়ে নিলেন । কালো রঙ এর ট্রে তে নিয়ে তাদের সামনে রাখলেন । তরুণী কোনো বিশেষ কথায় মশগুল ছিলো । আপু এসে দাড়াতে চুপ করে গেলো । 


আপু আবার কাউন্টারে ফিরে এলেন । 

  • তাই পাশে হাটা থেকেই কি…? আমি বললাম

  • তখনই না । অনার্স এর জীবনটা শেষ করার পর । ভার্সিটিতে শকুনের চোখ এর অভাব নেই । একটু গন্ধ পেলেই হলো । বেহায়া হয়ে যায় সব । যাই হোক ।  বের হওয়ার পর মাশফির ব্যবহার পরিবর্তন আসে । আগের মতো রেখে ঢেকে কবিতার আড়ালে ফ্লার্ট না, মাথায় গামছা বেধে নামার মতো । আমার অবশ্যই ভালো লাগতো । এমন একটা দিনেই তার কেক এর কান্ড ঘটালো। তারপর খুবই অল্প পরিসরে বিয়ে । সময়টা ভালো যাচ্ছিলো । ভালো দিনগুলো বড় দ্রুত চলে যায়। 


আপুর কন্ঠস্বর শুনে শঙ্কা হলো, জিজ্ঞেস করলাম

  • কিসে নিয়ে গেলো সেই দিনগুলো?

আপু এতক্ষণ চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলেন । এবার চোখ নামিয়ে নিলেন । স্বচ্ছ কাচে আপুর অস্বচ্ছ ছায়া পড়লো । ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,


  • মাশফি 

  • কিভাবে?

  • রবিন্দ্রনাথের অনুপম তার আশে-পাশে থাকা মেয়েদের পাত্তা দেয়নি, কিন্তু মাশফি পাত্তা না দিয়ে থাকতে পারে নি । কথার আড়ালে আড়ালে কখন যে কিছু অনুভূতি চোরের মতো ঢুকে গিয়েছিল সে টার পায়নি । আড়ালের কিছু সম্পর্ক আড়ালে রেখেই আমাদের বিয়েটা হয়েছিল । অন্তত তাই বলে গিয়েছিল তার চিঠিতে । 

  • কোথায় গিয়েছিল?

  • যেখানে সবার যেতে হয় সময় শেষে?


আমি কিছুক্ষণ আপুর দিকে তাকিয়ে রইলাম । কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । বলা উচিত হবে কিনা তাও জানি না । 


যুগলদ্বয় কাউন্টারের কাছে এলো । টাকার দেয়া নেয়া হলো ।  দোকানটা আবার খালি হলো । আমি আরও কিছুক্ষণ বসে থেকে টুল থেকে উঠলাম । মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করলাম কফির বিল দেয়ার জন্যে । আপু টাকাটা নিয়ে ভাঙতি ফেরত দিলেন । পুরোটা হলো চোখের সাথে চোখ না মিলিয়ে, বিনা বাক্য ব্যয়ে । বের হয়ে এলাম দোকান থেকে । উত্তপ্ত গরম রোদ আমাকে জড়িয়ে নিলো । শেষ কথার তিক্ত স্বাদ আমার মাথায়, কফির মিষ্টি স্বাদ মুখে । মিষ্টি । চিনি । চিনি কিনতে ভুলে গিয়েছিলাম !


 


                                                             —----*----------


Comments

Popular posts from this blog

অনর্থক

Why Not to Fall in Love with your Dream Girl

হ্যাপিম্যান