অনর্থক

 চেহারার মতো মানুষের অনুভূতির প্রকাশেভঙ্গিও ভিন্ন । 


সোজা-সাপ্টা কথা বলা রিধি অনূভুতির কথা বলে আড়ালে। যাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো তাকে বিজ্ঞ প্রত্নতাত্ত্বিকের মতো অনূভুতিগুলো খুঁজে বের করতে হবে। সেই রিধি বিশেষ একজনকে ভালোবাসে। যদিও বিশেষ সেই মানুষটাকে কোনো রকম বিশেষণ দিয়ে সে ডাকে না। না, এ তেমন সম্পর্ক নয়। বাইরে থেকে সে মানুষটা অনেকের মধ্যে একজন। স্কুলে যেতে যেতে তাদের কথা হয় । স্কুল থেকে আসতে আসতে তাদের কথা হয়। কথার বিষয়বস্তু সবসময় পড়া কিংবা চারপাশের প্রতিনিয়ত ঘটমান পরিস্থিতির গন্ডির মধ্যে থাকে। তাদের সময় চলে যায় কথা কাটাকাটির মধ্যে। অনিচ্ছাস্বত্তেও রিধি কথার ধারালো ফলায় এই মানুষটাকে ছোট করে ফেলে। মানুষটার মন খারাপ হয়ে যায় । কিছুদিন নিরব সময় কাটে। কোনোদিন আবার তাদের কথা হয়। কাটাকাটি হয়। চক্র চলতে থাকে। মৌসমের রঙ বদলায় । তাদের মনের ভেতরের মৌসমও কি রঙ বদলায়? সেটা জানা হয় না কারো। মুখ দিয়ে কিছু প্রকাশ না পেলেও আচরণে মৌসমের রঙ লাগে। আড়ালে আড়ালে খেলা চলে। লুকোচুরি খেলা। হয়তো আরও অনেক সময় চলতো যদি না ভাগ্য এসে বেয়াড়া ভাবে দাঁড়ি বসিয়ে দিত । সে অনেক কাল আগের কথা । রিধি এখন বাসা থেকে ১২৯.৫ কিমি দূরে থাকে। 

                                                                *


শূন্য কি মি এ অবস্থানরত মাশফি । ক্যফেতে বসে আছে । যতটা সময় না সে ভাবে, তারচেয়ে কম সময় খরচ করে কথায়। এর ফল হলো এই, ভাবনাতেই তার সময় চলে যায়, কথা আর বলা হয় না। রিধি তার পাশে বসে আছে। চোখে মুখে বিরক্তি । মাশফি কথা বলবে বলে ডেকে এনেছে অথচ কথা বলছে না । এসব কি? 

রিধির এমনিতেও মাশফি ছেলেটাকে তেমন পছন্দ করে না । সমস্যা হলো অপছন্দ করার মতোও গুণও তেমন নেই যে পাত্তা না দিয়ে থাকবে । এখন ঠেলা সামলাতে হচ্ছে । ভেপসা এই গরমের মাঝে তাকে বসে থাকতে হচ্ছে উজবুকটার পাশে । উজবুক কথা বলে না কেন? মাশফির চিন্তা ভাবনা জড়িয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই সঠিক বাক্যটা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না । দেয়ালে গিয়ে মাথাটা দুবার বাড়ি দিয়ে আসবে? রিধির মুখ দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ বিরক্ত। হঠাত উঠে গট গট করে হেঁটে চলে যেতে পরে। এখনই বলার সময়।

  • খুব গরম পড়ছে, না 

  • এইসব বালছাল বলার জন্যে আমাকে ডেকে আনছো!

রিধির রাগ অষ্টম আকাশে। কি বললে শান্ত হবে? আদৌ কি শান্ত হবে? আগ্নেয়গিরি থেকে বের হওয়া লাভা কি ফিরে যায়? 

  • না না, এই বইটা দিতে আসছিলাম

মাশফি ফোর্টি রুলস অব লাভ বইটা বের করলো। 

  • আজকেই কেন দিতে হবে?

  • এমনি

  • এমনি মানে? আমার সাথে মশকরা মারাও? যত্তসব!

মাশফি ধরে নিলো উঠে চলে যাবে । আর কথা হবে । কিন্তু না। রিধি বসে রইলো। বইটা হাতে নিয়ে নেড়ে- চেড়ে দেখলো। 

  • কত নিয়েছে?

  • দেড়শো

  • দেড়শো? এই বই? ছ্যাহ! এই বই নীলক্ষেত থেকে ৫০টাকা দিয়ে নেয়া যায়। লস খেলে

  • আমিই লসই খাই

  • কি? জোরে কথা বলতে পারো না?

  • বললাম আমি লস খাওয়ার মতোই মানুষ

  • হুম বুঝা যায়

  • উঠি তাহলে।

  • উঠবে? আরো কিছুক্ষণ থাকো?

  • থেকে কি লাভ? তুমি তো কথাই বলো না । আর এমনিতেও ভীষণ গরম। ভালো লাগছে না।

  • আচ্ছা । 


                                                                    *


রিধি রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে । সময়টা বিকেল। অনুপমের জন্যে অপেক্ষা করছে । অনুপম বাইরে এক পরিচিতের দেখা পেয়ে খাতির জমিয়েছে । রিধি যেহেতু সাথে আছে আলাপের ক্ষণটা কমিয়ে আনবে, কিন্তু আলাপ অল্প হলেও করতে হবে । আলাপি মানুষ। রিধির অপেক্ষা করতে খারাপ লাগছে না। সে চোখ বুঝে আছে । বিকেলের নরম সোনালী রোদ গায়ে মাখছে । হালকা একটূ বাতাস এলে হতো!

তার চোখের উপর ছায়া পড়লো । 


  • এই রিধিটিধি!

  • কি অনুপম টনুপম?

  • রোদ মাখছো? আমিও মাখি মাঝেমধ্যে। ম্যাসের ছাদে সময় পেলেই মাখি

  • আর রোদ মাখা! এই ধুলা-বালির মাঝে থাকলে মাডপ্যাক মাখা হয়ে যাবে

  • হেহে তাও খারাপ না

  • বসবা লাইব্রেরীতে? সময় আছে?

  • সময় না থাকলে সময় জোগাড় করে ফেলবো! দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র রিধি!

  • এহ! হইছে তেল মারা । টিউশনি থাকলে যাও

  • আসো আগে লাইব্রেরি ঘুরে আসি। পরেরটা পরে


তারা দুজনে লাইব্রেরির দিকে হাটতে থাকে।




                                                              —----



রাত ১০ঃ৪৪ 

২৩/০৯/২৪

সোমবার

ছায়ানীড়, মুন্সেফবাড়ি


Comments

Popular posts from this blog

Why Not to Fall in Love with your Dream Girl

হ্যাপিম্যান