এনিমেশন রিভিউ
যারা এনিমে দেখেন তাদের কাছে স্টুডিউ জিবলি একটি পরিচিত নাম । মনোরম দৃশ্য, মিউজিক আর ভিন্নধাচের গল্প দিয়ে সিনেমাখোরদের মন জয় করেছে এই জাপানিজ স্টুডিও । কর্ণধার হায়াও মিয়াজাকির খলনায়ক ছাড়াই গল্প বলার স্টাইল, ইসাও তাকাহাতার মানুষের করুণ গল্পটা ফুটিয়ে তোলার দক্ষতা মানুষকে অবাক করেছে । এমনি কিছু ছবি আজকে সাজেস্ট করবো ।
১। মাই নেইবর তোতোরোঃ
যে মনোরম দৃশ্যের কথা উল্লেখ করেছি তোতোরোতে পাবেন তাই । ৮০র দশকের এনিমেশন স্টাইল আপনার মন কাড়তে বাধ্য । অসুস্থ মায়ের হসপিটালটার কাছের গ্রামে দুই বোন বাবার সাথে এসেছে । পুরোনো ঘরের ভেঙ্গে পড়বে এমন অবস্থা । তবে বিশাল জঙ্গলের পাশের এই বাড়ি দুজনেরই ভালো লেগে যায় । ভালো লেগে যায় অদ্ভুত দেখতে একটা জন্তুকে । যাদের শুধু দেখা যায় শিশুদের চোখেই ।
যদি আপনি ফ্যান্টাসি জনরা পছন্দ করেন আর পরিবারের সাথে দেখতে চান তবে ১ ঘন্টা ২৬ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের এই সিনেমা আপনাকে নিরাশ করবে না ।
২। ক্যাসেল ইন দ্যা স্কাই
মিয়াজাকির আরেকটি ফ্যান্টাসি জনরার ছবি । পাজু নামের অনাথ ছেলের সাথে বহূদূরের শিতার সাথে হঠাত দেখা । শিতার পেছনে লেগেছে দুটো দল । তারা চাইছে শিতার গলায় জড়ানো লকেটটা । সেই লকেটটা রাস্তায় দেখা আকাশে থাকা একটা ভাসমান রাজ্যের । সেই লকেটের সাথে ভাসমান রাজ্যের সম্পর্ক কি? আগ্রহ জাগলে দেখে ফেলুন ২ ঘন্টা চার মিনিটের এই সিনেমাটি ।
৩। পোনয়ো
মারমেইডের নামের শুনেছেন? অর্ধেকমানুষ আর অর্ধেক মাছ? পোনয়ো তেমনি একটা মারমেইড । রাগ করে সে বাবার ঘর পালিয়ে সমুদ্রের তীরে চলে এসেছে । তাঁকে খুঁজে পায় সাতসুকে । দুজনে বন্ধু হতে সময় লাগে না । এদিকে পোনয়ো চলে আসায় সাগরে সুনামি চলে এসেছে । সাগর পাড়ের সামনে যা পাচ্ছে সব ডুবে দিচ্ছে। অন্যদিকে সাতসুকের মা আলাদা হয়ে গেছেন । এখন পোনয়ো আর সাতসুকে কি করবে? তারা কি হাল ছেড়ে দিবে? সাতসুকে তেমন ছেলে নয়! সে তার ছোট্ট নৌকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো মাকে খুঁজতে । তারপর?
গল্পটা ভালো লেগে থাকলে তাহলে আর দেরি না করে দেখে ফেলুন ১ ঘন্টা ৪৩ মিনিটের এই ছবি ।
৪। প্রিন্সেস মনোনোকে
মিয়াজাকি যে শুধু তোতোরো, পোনয়ো, আর ভাসমান রাজ্যের কাল্পনিক দুনিয়া বানান তাই না বাস্তবতাও দেখান । অস্ত্রের তৈরীর কলাকৌশল আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে পৃথিবীতে যুদ্ধের পরিমাণ বেড়েই গেছে। কখনো বা আত্মরক্ষার কখনো বা জায়গা দখলের অজুহাতে যুদ্ধের দামামা বেজেছে বহুবার । যুদ্ধের হাত থেকে রেহাই পায় না পরিবেশ আর প্রাণীও ।
প্রিন্সেস মনোনোকেতে সেই যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখানো হয়েছে । মনোনোকে শৈশব থেকে জঙ্গলে বড় হয়েছে । অভিভাবক বলতে আছে নেকড়ে বাঘ । একদিকে মনোনোকে পরিবেশ বাঁচানোর জন্যে মরিয়া আইরন টাউনের আসানো চায় বন জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করতে । উভয়কে থামানোর একমাত্র উপায় এমিশি গ্রামের প্রিন্স আশিতাকা । গল্পটা ভালো লাগলে দেখে ফেলুন ২ ঘন্টা ১৩ মিনিট এর সিনেমাটি। দেখার পর আপনার বনের প্রতি ভালোবাসা যে আরও বাড়বে এটা নিশ্চিত করে বলে দিতে পারি ।
৫। হুইস্পার অব দ্য হার্ট
আজকালকের এই সমাজে নিজেকে প্রতিনিয়ত যোগ্য করে না দেখালে কারোর চোখেই সম্মান পাওয়া যায় না । এসবে আমরা এত অভ্যেস্ত হয়েছি যে নিজের কাছেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ না দিলে রাতে ঘুম আসতে চায় না। একটা প্যাশন নিয়ে না বাচলে জীবনটা অর্থহীন মনে হয় । এই সিনেমাটি সেই প্যাশন এর কথা বলে । শিজুকু ১৪ বছরের হাই স্কুলে পড়া কিশোরী । লেখালেখির তার প্যাশন । সিরিয়াসলি নেয় না। সেইজি নামে আরেক ছেলের সাথে দেখার হওয়ার আগ পর্যন্ত । শিজুকু যখন জানলো সেইজি ভায়োলিন বানানো শিখতে ইটালি পর্যন্ত যেতে রাজি তখন সে নিজের প্যাশনের দিকে আবার ফিরে তাকালো । সিনেমাটি একদিকে নিজের প্যাশন আবিষ্কারের দিকটা দেখায় অপরদিকে দেখায় মনের মানুষ নিয়ে প্যাশনেট হওয়ার দিকটা । সব মিলিয়ে সিনেমাটি মন এ ভালো লাগা জাগায় ।
৬। নসিকা অব দ্যা ভেলি অব দ্যা উইন্ড
স্টুডিও জিবলি যুদ্ধ আর পরিবেশ এর উপর মানুষের বিরুপ প্রভাব নিয়ে যত যে কয়েকটা সিনেমা বানিয়েছি এ তার একটি । গল্পটা হাজার বছর পরের কথা । ভয়াবহ এক যুদ্ধের পর পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে । গাছের চিহ্ন নেই । পানির দেখা নেই । পৃথিবীর উপর হেঁটে বেড়াচ্ছে বিশালাকার সব কীট । এমনি একটা পৃথিবীতে বাস করে নসিকা । সে অন্য সবার চেয়ে আলাদা । যেখানে আশা নেই সেখানে সে আশা দেখে । সে ধূসর এই পৃথিবীতে মানবতা এখনো আছে । তবে নসিকার একদম উলটো প্রিন্সেস কুশানা । যুদ্ধকে সে সমাধান হিসেবে দেখে । এমন দুই বিরুপ চরিত্র যখন মুখোমুখি হয় তখন ফলাফল কি দাঁড়ায়?
১ ঘন্টা ৫৭ মিনিটের এই সিনেমাটি সেই প্রশ্নের উত্তর দেয় । উত্তর দেয় কি করে বৈরী পরিবেশেও আশা ছাড়তে নেই ।
৭ । হাউলস মুভিং ক্যাসল
যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে তৈরি আরেকটি সিনেমা । চুপচাপ স্বভাবের সোফি একটা টুপির দোকান চালায় । তার জীবন পুরোই উলটে যায় যখন হঠাত একদিন কুখ্যাত ডাইনি ম্যাডাম শালিমার এসে তাঁকে অভিশাপ দিয়ে যায় । সে কিশোরী থেকে হয়ে যায় একটা ৬০ বছরের বুড়ি । নিজের এই অভিশাপের লজ্জায় সোফি পালিয়ে যায় পাহাড় এর দিকে । সেখানে সামনে পড়ে যায় হাউলের ক্যাসল যেটা মাটির উপর এদিক থেকে সেদিক হেঁটে বেড়ায় । ক্যাসেলে ঢুকার পর সোফির সাথে ঘটতে থাকে একের পর এক অদ্ভুত সব ঘটনা ।
৮। এরিয়েটি
গালিভারের লিলিপুটদের কথা মনে আছে? ধরুন সেই লিলিপুটরা তাদের দ্বীপ থেকে শহরে এসে আমার আপনার ঘরে বাসা বেধেছে, তাহলে কেমন হবে? এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্যেই হয়তো এরিয়েটি নামের সিনেমা তৈরি করা হয়েছে । শো নামের এক কিশোর অসুস্থ হয়ে গেলে সুস্থ হওয়ার জন্য সে যায় তার নানুর বাড়ি । সেখানে গিয়ে হঠাত দেখা এমনি এক ছোট মানুষদের যারা নিজেদের ডাকে ‘বরোওয়ার’
বা ধারকারী বলে । শো আর এরিয়েটির মধ্যে চলে অদ্ভুত লুকোচুরি খেলা । সব খেলারই শেষ আছে । এই খেলা কি করে শেষ হবে? ২০১০ সালে বানানো ফ্যান্টাসি জনরার এই সিনেমা আপনাকে ভালো লাগার অনুভূতি দিবে ।
৯। গ্রেভ অভ দ্যা ফায়ারফ্লাইজ
প্যাসিফিক যুদ্ধের উপর নির্মিত এই সিনেমা দেখে কাঁদেনি এমন মানুষ পাওয়া ভার । যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে দুই অনাথ ভাই বোন এর বাঁচার চেষ্টা গল্প পরিচালক ইসাও তাকাহাতা এতটা মানবিকতার গাঁথুনি দিয়ে বানিয়েছেন যে সেটা মানুষ এর মনে সুই এর মতো গিয়ে বিঁধে । খেয়াল করবেন বাঁচার চেষ্টা বলেছি । কারণ যুদ্ধ কয়জনের উপরই বা সদয় হয়? বুলেট বন্দুকের লড়াই এ যেমন মানুষ মরে খাবারের অভাব, পরিষ্কার পানি আর জায়গার অভাবেও মরে । সেই যন্ত্রণাই যেন দর্শক তিলে তিলে টের পাবেন সিনামাটা দেখে ।
১০ । পম পোকো
পরিবেশ এর উপর মানুষের বিরুপ প্রভাব মিয়াজাকি দেখান গম্ভিরতার সাথে আর ইসাও তাকাহাতা দেখান হাস্যরসের মধ্য দিয়ে । গল্পটা রাকুন জাতের একধরণের কুকুর নিয়ে । জাপানে এ ধরণের প্রাণীদের ডাকা হয় তানুকি নামে । এরা সামাজিক, তবে অনেক দুষ্ট । এরা আকার বদলাতে পারে । মানুষের উন্নয়নের চাপে এরা বাস্তুহারা হয়ে গেল । রাগে ক্ষোভে এদের কয়েকজন মানুষ এর উন্নয়নের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করলো । এদের একেকজন একেক কৌশন অবলম্বন করে । এদের কৌশল কি সফল হবে? জানতে হলে দেখতে হবে অনবদ্য এই সিনেমাটি ।
Comments