আই এম ডি বি টপ টেন
সিনেমখোরদের জন্যে আই এম ডি বি বেশ পরিচিত একটা নাম । একটা সিনেমা জনসাধারণের মাঝে কেমন সাড়া পাচ্ছে সেটা চট করে রেটিং দেখে বুঝে নেয়া যায় । রেটিং সিনেমার ভালো মন্দের মানদন্ড নয় কারণ সব সিনেমা নম্বর এর বক্সে বন্দি করা যায় না । তবু এলগরিদমের দোহাই দিয়ে নম্বর যুক্ত করতেই হচ্ছে । তবে বেশ কয়েক দশক ধরে যে সকল সিনেমা নানান ভাষাভাষি মানুষদের মন মাতিয়ে আসছে সেই সেরা দশ নিয়ে আজকের আয়োজন ।
১। শশাংক রিডেম্পশান
খ্যাতনামা সাহিত্যিক স্টিফেন কিং এর জনপ্রিয় উপন্যাস এর উপর নির্মিত এই সিনেমা সিনেমাপ্রেমিদের মন জয় করেছে এর সর্বজনীন থিম দিয়ে । নিরাশার মাঝেও কি করে আশাকে টিকিয়ে রাখা যায় । এন্ডি ডুফ্রের সেই বিখ্যাত উক্তি “হোপ ইজ এ গুড থিং, মেইবি দ্যা বেস্ট থিং এভার” মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে বারে । ভুল মামলায় জড়িয়ে যাওয়া এই ব্যাংকার কয়েদখানায় কি করে ২৮ বছর ধরে তার আশা জিইয়ে রেখেছিলেন জানতে দেখে ফেলুন কালজয়ী এই সিনেমাটি । যুক্ত হয়ে যান ইতোমধ্যে দেখে ফেলা ৩০ লক্ষ মানুষের কাতারে!
২। দ্য গডফাদার
৪০ এর দশকে আমেরিকায় ইতালিয়ান মাফিয়া করলিওন ফ্যামিলির আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নির্মিত আরেকটি জনপ্রিয় সিনেমা এটি । ক্ষমতার টিকিয়ে রাখার জন্যে মানুষ যে কত নিচে নামতে পারে তার একটি উদাহরণ এই সিনেমা । তিন ভাগে নির্মিত এই সিনেমার প্রথম সিনেমা এটি । যেখানে পিতা পুত্রের সম্পর্ক দেখানো হয় । ডন করলিওন চান পুত্র তার ক্ষমতার ভার নিক কিন্তু কিন্তু পুত্র কিছুতেই রাজি নয় এইসবে । তবে শেষমেষ রাজি হতেই হয় ঘটনার পালাবদলে । সেইসব ঘটনার আবহ জানতে দেখতে হবে দ্যা গদফাদার । ২০ লক্ষ লোক যা উপভোগ করেছে ।
৩ । ডার্ক নাইট রাইজেস
ক্রিস্টোফার নোলান বর্তমানে সিনেমাখোরদের জন্যে এলিট শ্রেনীর কাতারে পড়া নাম । যার নাম শুনলেই মনে আসে টান টান উত্তেজনার দৃশ্য, আবেগময় দৃশ্য আর নন-লিনিয়ার প্লট অর্থাৎ ঘটনা গুলো সরল ভাবে না গিয়ে আগে ভাগে যায় । ডার্ক নাইটেও তার ব্যতিক্রম হয়নি । ব্যাটিম্যান ট্রিলজি সিরিজের শেষ অংশ ডার্ক নাইট । প্রথম অংশে ব্যাট্ম্যানের অরিজিনের দিকে ফোকাস করা হয়, দ্বিতীয় অংশে বেইন নামে ভিলেন আসে, আর তৃতীয় অংশে আসে জোকার । হিথ লেজার এর অনবদ্য অভিনয় যেমন সিনেমাপ্রেমীদের আভিভূত করেছে তেমনি ২০০৯ সালে মৃত্যু পরবর্তী অস্কার পাওয়ার ঘটনা করে আবেগতাড়িত । অন্যসব অভিনেতাদের কাজ প্রশংশনীয় হলেও পর্দায় হিথ লেজার তার অভিনয় দিয়ে দর্শকদের এমন ভাবে মাতিয়ে রেখেছেন যে সেটাকে কোনোভাবেই জোক বলা যায় না ।
৪ । গডফাদার ২
প্রথম সিনেমার সফলতার রেশ ধরে তৈরি হয় দ্বিতীয় সিনেমা । এই অংশে ফোকাস করা হয় ভিটো করলিওন এর মাফিয়া হবার শুরু গল্প আর তার মৃত্যুর পর মাইকেলের মাফিয়া সাম্রাজ্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে । প্রথম সিনেমার মত এই সিনেমাও দর্শকদের মন জয় করতে দেরি করেনি ।
৫। টুয়েলভ এংরি ম্যান
আমেরিকার আদালতে জুরি সিস্টাম বলে একটা ব্যাপার আছে । সমাজের আইনমাণ্য করা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে থেকে একটা দলকে নির্বাচিত করা হয় মামলার রায় নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্যে । সেই মতামতের ভিত্তিতে আসামীর আদেশ শোনানো হয় । আর এই সংখ্যা থাকে ১২ জন । এমনি এক ১২ জন এর উপর দায়িত্ব আসে ১৮ বছরের ছেলের বাবা হত্যার রায় শোনানোর । তবে বিপত্তি বাধে যখন ১১ জন রায় ছেলের বিপক্ষে দিলেও একজন দিলো পক্ষে । কেনো?
৬ । লর্ড অব দ্যা রিংসঃ রিটার্ন অব দ্যা কিং
টলকিনের কালজয়ী উপন্যাস এর উপর নির্মিত ট্রিলজির তৃতীয় এই কিস্তিও বাজিমাত করেছে বিশ্বের নানান ভাষাভাষীদের মাঝে । মিডল আর্থের নামের পৃথিবী নিয়ে গড়া এই উপন্যাস এর গল্প একটা সর্বক্ষমতাধর আংটি নিয়ে । যার হাতে থাকে সে ই ক্ষমতা পায় । অন্তত মানুষের তাই ধারণা ছিল । কেউ জানতো না আংটির ক্ষমতা শুধুমাত্র এর মালিক Sauron হাতেই । তৃতীয় কিস্তিতে ফোকাস করা হয় ফ্রোডো আর সেম এর রিং ধ্বংসের গল্প ।
৭ । শিন্ডলারস লিস্ট
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের সময় জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর এডলফ হিটলার ইহুদি বিদ্বেষ চরমে উঠেছিল । কয়েদখানা তৈরী করে সেখানে নানান অমানবিক পদ্বতিতে মানুষ মারার উপায় বের করেছিলেন তিনি । এমনি এক সময়ের একজন মানুষ ছিলেন অস্কার শিন্ডলার । নাতজি পার্টির একজন সদস্য হয়ে তিনি কিভাবে এই অসহায় ইহুদিদের বাচিয়েছিলেন তার গল্প বলে এই সিনেমাটি । পরিচালক স্পিলবার্গ এ পর্যন্ত যত সিনেমা তার মধ্যে এই সিনেমা যেন মুকুটের পালক ।
৮। পাল্প ফিকশান
কোয়েনটিন তারানটিনো যত না একজন পরিচালক তার চেয়ে বেশি একজন সিনেমাখোর । নানান কায়দায় তিনি তার সিনেমার মধ্যে দিয়ে সেটাই বারবার দেখাতে চান । যে বয়সে শিশু খেলনা নিয়ে খেলে সে বয়সে তারানটিনো সিনেমা দেখা শুরু করে । কাজেই প্রভাব তো আসবেই । হলিউডের স্বাধীনচেতা সিনেমা পরিচালকদের মধ্যে একজন এই তারানটিনো । ফরাসি পরিচালক ট্রফো এমন মানুষদের বলেছেন Auteur (অটাহ) বলে । অর্থাৎ যারা সিনেমা বানানোর সময় নিজেকে পরিচালক কম নিজেকে উপন্যাসের লেখক হিসেবে ভাবতে পছন্দ করেন বেশি।
তারানটিনোর বেলায় কথাটা খাটে বেশি । পাল্প ফিকশান দিয়ে তিনি তাই প্রমাণ করেন । নন লিনিয়ার নেরেটিভ অর্থাৎ ঘটনা সরলভাবে না গিয়ে একটার আগে আরেকটা আসছে । অধ্যায় দিয়ে ভাগ করা প্রত্যেকটা দৃশ্য । অন্য সব সিনেমার তুলনায় সবচেয়ে ডায়লগপ্রবণ তার সিনেমা । যেহেতু তারানটিনোর সিনেমা গালাগালি তো সাথে থাকছেই!
একটা রেস্টুরেন্টে দুজন ছিচকে চোরের প্রথম ডাকাতি, দুইজন হিট্ম্যানের খুন করার ঘটনা, এক কুস্তিযোদ্বার জুয়ার টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এসব শুনতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা মনে হলেও প্রত্যেকটা দৃশ্য কি করে এক পথের পথিক হয় তাই তারানটিনো দেখিয়েছে সাবলীলভাবে ।
৯। লর্ড অব দ্যা রিংসঃ ফেলোশিপ অব দ্যা রিং
সিনেমাটি টলকিনের প্রথম বই ফেলোশিপ এর উপর নির্মিত । শান্তিপ্রিয় হবিটরা ঝামেলা পছন্দ করে না । এডভেঞ্চারকে তাই তারা ঝামেলা মনে করে । কিন্তু হবিটদের মধ্যে দ্বিতীয় আরেকজনও যে এর ব্যতিক্রম করবে এটা কেউ ভাবতে পারে নি । বিলবো ব্যাগিন্স এর পর এবার নাতি ফ্রোডোকেও পাড়ি দিতে হবে মিডল আর্থের সুদূর পথে । কেন? কারণ সে বিপদে আছে । গলাম নামের এক প্রাণী sauron এর দানবদের অত্যাচারে হবিটদের গ্রামের কথা বলে দিয়েছে । এত সব কথা কি কনফিউজিং লাগছে? দোষের কিছু নেই । এক্কেবারে সিনেফাইল না হলে লর্ড অব দ্যা রিংস খুব কম মানুষই দেখে । যদি আপনি ইতিহাস, যুদ্ধ, ফ্যান্টাসি জনরা পছন্দ করেন তবে নিঃসন্দেহে এই সিনেমা ট্রিলজি আপনার জন্য!
১০। দ্য গুড, দ্য ব্যাড, এন্ড দ্য আগলি
লোভ-লালসা একটা পাগলা ঘোড়া । কখন যে সে কোনখানে ছুটবে আর কোন হতভাগা যে তার সামনে পড়বে সেটা বলা মুস্কিল । এমনি তিন জন লোভিকে এই সিনেমা । সময়টা ১৮৬২ । গোত্রযুদ্ধে আমেরিকার আবহাওয়া বিষাক্ত । কেউ ই কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না । অর্থনীতির অশান্তির কারণে ডাকাতি বেড়ে গেছে । সেইসব ডাকাতদের নামে মোটা অংকের টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করা হয় । টুকো আর ব্লন্ডি এর সুযোগ নিলো । ব্লন্ডি টুকোকে ধরিয়ে দেয় কোনো গ্রামের পুলিশের কাছে আর পুরষ্কার নেয়। যেই মুহুর্তে না টুকোর অপরাধের জন্যে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে সেই মুহুর্তে ব্লন্ডি বন্দুকের এক নিশানায় দড়ি ছিড়ে দেয় । পালিয়ে গিয়ে দুজনে মিলে ভাগাভাগি করে নেয় টাকা । তবে কি হবে যদি এদের মধ্যে একজনের মাথায় আসে প্রতিশোধ এর আগুন জ্বলে? আরেকজন অর্থের লোভে আরেকজন যদি এদের দুজনের পেছনে লাগে?
যদি আপনার পুরোনো ছবি, স্টাইলিশ গানফাইট, আর ক্লেভার প্লট ভালো লাগে তবে অবশ্যই এই সিনেমা আপনার জন্যে!
Comments